আদালতে যাচ্ছে শেয়ারহোল্ডাররা জেএমআই’র প্রতারণার বিরুদ্ধে

জেড নিউজ বিডি.কম রিপোর্টঃ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড গত ৩ জানুয়ারি জানিয়েছিল, জাপানের নিপরো করপোরেশনের কাছে কত দরে শেয়ার বিক্রি করবে- তা ইজিএমে শেয়ারহোল্ডাররাই ঠিক করবেন। কিন্তু এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের মতামত না নিয়েই বাজার দরের অর্ধেকেরও অনেক কম দরে কোম্পানিটি শেয়ার বিক্রি করছে।

শেয়ারহোল্ডারদের নয়, জাপানের নিপরো করপোরেশনের প্রস্তাবিত শেয়ারপ্রতি ১৬৪ টাকা ১০ পয়সা দরেই এক কোটি ১১ লাখ শেয়ার মোট ১৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করবে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস। যদিও গত

গতকাল শনিবার রাজধানীর শান্তিবাগে নিবন্ধিত কার্যালয়ে ইজিএমে কোম্পানির চেয়ারম্যান জাবেদ ইকবাল জাপানের নিপরো করপোরেশনের প্রস্তাবিত শেয়ারপ্রতি ১৬৪ টাকা ১০ পয়সা দরেই এক কোটি ১১ লাখ শেয়ার মোট ১৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকায় শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব করেন। উপস্থিত শেয়ারহোল্ডাররা এ দর নিয়ে আপত্তি তুললেও তা কাজে আসেনি। ইজিএমে উপস্থিত ছিলেন এমন শেয়ারহোল্ডারদের কয়েকজনের অভিযোগ, এ শেয়ার কেনাবেচার ঘটনায় তারা প্রতারিত হয়েছেন। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটন। তারা কয়েকজন কোম্পানিটির প্রতারণার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার চিন্তা করছেন।

এ বিষয়ে বিএসইসির এক কর্মকর্তা জানান, এক্ষেত্রে কোম্পানিটি যখনই শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, তখনই সুনির্দিষ্ট কোনো দরপ্রস্তাব করতে পারত। এক্ষেত্রে ওই দিনের আগের নির্দিষ্ট সময়ের (সর্বোচ্চ ছয় মাস) বাজারের ওয়েটেড এভারেজ মূল্যে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব করতে পারত। তবে এ মূল্য কোনোভাবে যেদিন ঘোষণা আসবে, তার বাজার মূল্যের তুলনায় কম হতে পারে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায় অনুষদ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মূসা বলেন, বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি শেয়ার বিক্রি করার ক্ষেত্রে এটাই সর্বজন অনুসৃত রীতি। জেএমআই সুস্পষ্টত এ রীতির ব্যত্যয় করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিলে এমনটি হওয়ার সুযোগ ছিল না বলে মনে করেন তিনি।

অবশ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান জানান, বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জের সংশ্নিষ্ট বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। জেএমআই বলেছে, 'এই শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে একটি দর আগেই নির্ধারণ করা আছে। তবে আগাম ঘোষণা দিলে শেয়ারটির দরে প্রভাব পড়তে পারে, বিধায় তারা তা আগাম প্রকাশ করবে না। ইজিএমেই তা প্রকাশ করা হবে।' অথচ জেএমআইয়ের গত ৩ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী, এর আগে শেয়ারটির দর নির্ধারণ করা হয়নি, ইজিএমেই শেয়ারটির দর নির্ধারণ করা হবে। এ অবস্থায় ডিএসই যখন জানল, দরটি আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কেন শেয়ারহোল্ডারদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানালো না- এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি ডিএসইর এমডি।

এদিকে গতকাল ইজিএমে অংশ নেওয়া কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার জানান, ডিএসইতে জেএমআই সিরিঞ্জের বাজারদর এখন ৩৮৬ টাকা। নিপরোর কাছে শেয়ার বিক্রির ইস্যুতে শেয়ারটির দর ১৮০ টাকা থেকে উঠে ৫০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। তরা বলছেন, জেএমআই যদি আগেই জানাত, তার পর্ষদ ১৬৪ টাকা দরে শেয়ার বিক্রিতে রাজি হয়েছে, তাহলে শেয়ারটির দর ৫০০ টাকা হতো না। এখন যারা এত দরে শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তার দায় কে নেবে?।

জেএমআইর শেয়ারদর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত নভেম্বরের শুরুতে এর দর ছিল ১৮০ টাকার নিচে। বড় উত্থান হয় গত ৬ ডিসেম্বরের পর। ওইদিন শেয়ারটির দর ছিল ২০০ টাকা। এরও প্রায় এক মাস পর নিপরোর কাছে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে। ততদিনে শেয়ারটির দর ৩০৭ টাকা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পরই শেয়ারটির দর 'রকেট গতি' পায়। মাত্র নয় দিনে আরও ২০০ টাকা বেড়ে গত ১৬ জানুয়ারি শেয়ারটি তার ইতিহাসের সর্বোচ্চ দর ৫০০ টাকা ছাড়ায়। অবশ্য গত এক মাস ধরে শেয়ারটির দর কমছে। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ ৩৮৬ টাকা ৯০ পয়সা দরে লেনদেনটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

এদিকে ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ১১টায় ইজিএম হওয়ার কথা। ডিএসইর ওয়েবসাইটে এখনও এ তথ্যটি রয়েছে। কিন্তু গতকাল সকাল ১০টায় ইজিএম শুরু হয়, শেষ হয় ১১টার আগেই। এতে অনেক শেয়ারহোল্ডার সকাল ১১টায় এসে ইজিএমে অংশ নিতে পারেননি। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

   

           

জেড নিউজ বিডি.কম /রাকিব